ক
...মুমিন (বিশ্বাসী) এখন আর তার বিশেষ নন মাহরাম মানুষটির দিকেও তাকায় না ;কারণ ইতিমধ্যে সে জানতে পেরেছে যে কোন নন- মাহরাম মহিলার দিকে তাকালে সেটা চোখর যিনা এর মতো গুরুতর পাপ হয়। কিন্তু পাপ তো আর সহজে ছাড় দেয় না, পাপের একটি কপাট হয়তো আপনি বন্ধ করলেন কিন্তু শয়তান আপনার অজান্তে অন্য একটি কপাট খুলে দেয়।
মূল কথায় আসি,মুমিন আজও তার বিশেষ নন-মাহরাম মানুষটিকে মিস করে, আনমনে তাকে নিয়ে ভাবতে থাকে, কল্পনার মানসপটে ভেসে ওঠে তার চেহারা, অনুভূতির ডানাগুলো দিন দিন পাখা ঝাপটাতে থাকে,ইচ্ছা জাগে তার সঙ্গে একান্তে মিলিত হওয়ার, তাকে দেখতে না পাওয়ায় তার সংস্পর্শে আসার জন্য মুমিনের অন্তরে হাহাকার করে।মুমিনের অন্তরে চেয়ে গেছে এক মহাভয়ঙ্কর ব্যাধি,যা নীরবে নষ্ট করে দিচ্ছে সকল সৎকাজের প্রয়াসকে,,এই নীরবঘাতী ব্যাধিটাই হলো "অন্তরের যিনা!!!"
মহানবী স. বলেন, "অন্তরের যিনা হলো আকৃষ্ট ও বাসনা করা(নন-মাহরমকে)--সহিহ বুখারী-৬২৪৩
এই আকৃষ্টতার উপর ভিত্তি করে মুমিন প্রবেশ করে অজনা পাপের এক রঙিন দুনিয়ায়;যেখানে রোজকার গুনাহগুলো তার কাছে অনির্ণেয়ই থেকে যায়। আল্লামা ইবনে কায়্যিম রহঃ বলেন "অন্তরের হারাম কাজগুলো ব্যাভিচার,মদপান বা এজাতীয় নিষিদ্ধ কাজের চেয়ে বেশি হারাম। কেননা তাতে মানবাত্মা রোগাগ্রস্থ হয়, আর অন্তরের রোগ শরীরের রোগের চেয়ে ক্ষতিকর"
খ
আমাদের তথাকথিত সুশীল সমাজের দেওয়া 'ক্রাশ' নামক তকমাটিই হলো অন্তরের যিনা।বলা যায় যিনা শব্দটিকে ক্রাশ নামক কালো চশমা পড়ি আমাদের সামনে উপস্থাপন করছে ;ফলে এর অন্তর্নিহিত গুনাহটি আমাদের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না।
আজ মিডিয়াতে বিনোদনের নামে দেওয়া হচ্ছে অন্তরের যিনা তথা ক্রাশ খাওয়ার প্রশিক্ষণ।অধুনা সমাজের গান গুলোর লিরিক্স এর দিকে তাকান; সেখানে শোনানো হচ্ছে নারীর প্রতি আসক্তিমূলক কথা। সিনেমা,নাটকে উৎসাহিত করা হচ্ছে হারাম রিলেশনশিপকে; যা দুর্বল মুমিনের মনে তৈরি করছে শূন্যতা!
আর সেই শূন্যকে অসৎ উপায়ে পূর্ণ করার জন্য শয়তান আপনার কাছে তুলে ধরছে নব নব পাপের রূপরেখা! অতঃপর সেই রূপরেখা ধরে আপনি যতই এগোবেন ততই পাপের চোরাবালিতে হারিয়ে যেতে থাকবে।এজন্য আমাদের রব আমাদেরকে সতর্ক করে বলেছেন, "তোমরা যিনার ধারে কাছেও যেয়ো না কারণ এটি একটি লজ্জাজনক ও নিকৃষ্ট কর্ম, যা অন্যান্য নিকৃষ্ট কর্মের পথ খুলে দেয়"
~সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত-৩২
সুতরাং, মুমিন বেরিয়ে আসুন সেই মায়াজাল থেকে, অনুতপ্ত হোন নিজ পাপের জন্য!
ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করে দিবেন।মহানবী স. বলেন, "সকল আদম সন্তানই গুনাহগার, তবে তাদের মধ্যে উত্তম সে,যে তওবা করে"~তিরমিযি-২০৯৯
সবশেষে কিছু কথা বলি, ফেসবুকে নন-মাহরাম মানুষকে বন্ধু বানানোর দরকার কি?আজকে কোন নন মাহরাম মহিলাকে বন্ধু বানালেন কালকে তার আকর্ষনীয় কোন ছবি যুক্ত পোস্ট দেখলেন(এখানে চোখের যিনা করলেন),অতঃপর তার রূপে মুগ্ধ হয়ে তাকে নিয়ে যিনার নিষিদ্ধ সাগরে ডুব দিলেন। অবশেষে সে সাগরে ডুবে থাকার জন্য 'সাবমেরিন' তথা মেসেঞ্জারে গিয়ে হাই /হ্যালো এর যাত্রা শুরু করলেন অতঃপর শয়তান বলবে "ওয়েলকাম টু হারাম রিলেশনশিপ "
..আসতাগফিরুল্লাহ!!সুতরাং মুমিন প্রতিকারের আগে প্রতিরোধে তৎপর হোন তখন আপনাকে আর প্রতিকারের জন্য অনুশোচনা করতে হবেনা নচেৎ উৎপেতে বসে থাকা শয়তানের ফাদে আপনি আটকা পড়ে যাবেন! আল্লাহর রাসুল হযরত মুহাম্মদ স. আমাদের অন্তরকে যিনা ও অন্যান্য পঙ্কিলতা থেকে হেফাজতের জন্য একটি দুআ শিখিয়ে দিয়েছেন তা হল- " يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ "
"ইয়া মুকাল্লিবাল ক্বুলুব, সাব্বিত ক্বালবী আ'লা দীনিক"
(হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী! আপনি আমার অন্তরকে দ্বীনের উপর রাখুন)- জামি তিরমিজি -২১৪০
..জাজাকাল্লাহ খাইরান!
আমির খসরু
১২-২-২০২১ইং
This comment has been removed by the author.
ReplyDelete